বিদ্যুৎচালিত গাড়ির ভবিষ্যৎ ‘ইন-হুইল’ মোটরে?***

 # ***বিদ্যুৎচালিত গাড়ির ভবিষ্যৎ ‘ইন-হুইল’ মোটরে?***


সেই ১৯০০ সালে সামনের চাকার সঙ্গে ব্যাটারিচালিত মোটর জুড়ে দেওয়া গাড়ি দেখিয়েছিলেন ফার্দিনান্দ পোর্শে ও লুডভিগ লোনার। সে সময়ে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও পেট্রোলচালিত গাড়ির বিপরীতে ধোপে টিকতে পারেনি এ প্রযুক্তি।


এক শতকের বেশি সময় পর বিদ্যুৎচালিত বাহন নির্মাণের শিল্প ইঙ্গিত দিচ্ছে, মোটর সরাসরি চাকার সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার প্রযুক্তি আবার ফিরে আসছে দৃশ্যপটে।


এ প্রযুক্তির সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হল, যানের ঠিক যেখানে সবচেয়ে বেশি শক্তি প্রয়োজন, সরাসরি সেই চাকাইতেই বিদ্যুৎ শক্তি সরবরাহ করে।


স্লোভেনিয়ার কোম্পানি ‘এলাফ প্রোপালশন টেকনোলজিস’-এর প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা লুকা আমব্রোজিচের ভাষ্যে, “ইন-হুইল মোটর একটা গেইম চেঞ্জার।”


সিএনএন জানিয়েছে, বিদ্যুৎচালিত বাহন নির্মাণ খাতে ‘ইন-হুইল মোটর’ প্রযুক্তি নিয়ে যে কটি কোম্পানি কাজ করছে, তার মধ্যে প্রথমেই নাম আসে ‘এলাফ প্রোপালশন টেকনোলজিস’ এর নাম।


আমব্রোজিচের মতে, গাড়ির নকশা করার ক্ষেত্রে ‘চূড়ান্ত পর্যায়ের স্বাধীনতা দেয়’ ইন-হুইল মোটর প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি নির্মাতাদের আরও ভালো নকশার গাড়ি নির্মাণের সুযোগ দেবে বলে মনে করেন তিনি।


চাকার মূল কাঠামোর মধ্যেই যদি প্রয়োজনীয় সবকিছু এঁটে দেওয়া যায়, বা পাশেই জুড়ে দেওয়া যায়; তবে গিয়ার বক্স বা ড্রাউভ শ্যাফটের মত যন্ত্রাংশগুলোর আর প্রয়োজন পড়বে না। বাজারের প্রচলিত জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর গাড়িগুলোতে অনবোর্ড মোটর থেকে চাকায় শক্তি পাঠানোর কাজটি করে এ যন্ত্রাংশগুলো।


অ্যামব্রোজিচ সিএনএনকে বলেছেন, এর ফলে গাড়ির ওজনও কমে আসবে। গাড়ির ভেতরে অনেক জায়গা বেঁচে যাবে এবং নির্মাতার হাতে আরও অ্যারোডায়নামিক নকশা করার সুযোগ মিলবে।


বাহনের নকশা যত বেশি অ্যারোডায়নামিক হবে; অর্থ্যাৎ বাতাস কেটে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা যত বেশি থাকবে, শক্তির চাহিদা তত কম হবে। ফলে ছোট ব্যাটারিতেই কাজ চলবে, বাহনের ওজন আরও কমে আসবে।


**সুপারকার থেকে পিকআপ ট্রাক**


২০০৬ সালে এলাফ প্রতিষ্ঠা করেছেন গোরাজ লাপিচ আর কোয়ান্টাম ফিজিসিস্ট আন্দ্রেউ ডেটেলা। সুপারকার থেকে শুরু পিকআপ ট্রাক পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের বিদ্যুৎচালিত গাড়ির জন্য ইন-হুইল মোটরের নকশা করছে এ কোম্পানি।


ডাচ কোম্পানি লাইটইয়ারের ‘লাইটইয়ার জিরো’ সুপারকারের প্রতিটি চাকায় ব্যবহৃত ইন-হুইল মোটরের নকশা করতে এলাফের সঙ্গে জোট বেঁধেছিলেন এর নির্মাতারা। এ বছরই গাড়িটির বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে লাইটইয়ার।


বিদ্যুৎচালিত গাড়ি নির্মাতা অ্যাপ্টেরা মোটর্সও নিজস্ব তিন চাকার যানের জন্য এলাফের নকশা করা ইন-হুইল মোটর ব্যবহার করতে চুক্তি করেছে বলে জানিয়েছে সিএনএন।


নিজস্ব পিকআপ ট্রাকে এলাফের নকশা করা হাব মোটর ব্যবহারের চুক্তি করেছে আরেক কোম্পানি লর্ডসটাউন মোটর্স। সেপ্টেম্বরে পিকআপ ট্রাকগুলোর বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করবে কোম্পানিটি।


অ্যামব্রোজিচের মতে, এই উদাহরণগুলোই প্রমাণ দিচ্ছে যে হালকা যান অথবা ভারি কাজ – উভয় ক্ষেত্রেই ইন-হুইল মোটর ব্যবহারের সুযোগ আছে। তবে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রয়োজন বুঝে নকশায় পরিবর্তন আনতে হয়।


কিন্তু এ প্রযুক্তি আদৌ মূল ধারার ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে পারবে কি না, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা সন্দিহান বলে জানিয়েছে সিএনএন।


বাজার গবেষক প্রতিষ্ঠান ‘আইডিটেকএক্স’-এর জ্যেষ্ঠ প্রযুক্তি বিশ্লেষক জেমস এডমন্ডসনের মতে, প্রথমসারির পরিবহন যান নির্মাতারা অনবোর্ড মোটর প্রযুক্তির দিকেই ঝুঁকেছেন। এ পরিস্থিতিতে ইন-হুইল মোটর প্রযুক্তি প্রয়োগ করতে চাইলে নকশা একদম গোড়া থেকেই পাল্টে ফেলতে হবে।


“আপনার যদি বাহনের নকশা একদম গোড়া থেকে শুরু করতে হয় তবে তাতে ব্যাপক বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে।”


উৎপাদকরা ইন-হুইল মোটরের স্থায়িত্ব আর সাসপেনশন নিয়েও শঙ্কিত বলে জানিয়েছেন তিনি। রাস্তায় চলার সময় কম্পন আর ধুলো-পানির সবই সরাসরি ইন-হুইল মোটরে গিয়ে লাগে; ইন-হুইল মোটর চাকার ওজনও বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ কিছুটা হলেও কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে।


তবে গাড়ির অন্যান্য অংশের ওজন কমিয়ে চাকার বাড়তি ওজনের সঙ্গে সমন্বয় করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন তিনি।


**চাহিদা বাড়বে ইন-হুইল মোটরের**?


বাজার গবেষক প্রতিষ্ঠান মার্কেটস অ্যান্ড মার্কেটস-এর ২০২১ সালের এক প্রতিবেদন বলছে, বিদ্যুৎচালিত গাড়ির বিক্রি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইন-হুইল মোটরের চাহিদা বাড়ার প্রত্যাশা করছেন বিশ্লেষকরা। ২০২৬ সাল নাগাদ ইন-হুইল মোটর শিল্পের আকার চারশ কোটি ডলারে পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা তাদের।


ওই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বিদ্যুৎচালিত গাড়ির জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, বিদ্যুৎ শক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে এবং গাড়ির ভেতরে জায়গা বাঁচাতে ইন-হুইল মোটরেই আগ্রহী হচ্ছেন নির্মাতারা।


Source: BDNEWS24

Comments

Popular posts from this blog

মুর্খের সাথে কখনো তর্কে যেওনা

No Dorai (2019) Bangla Movie Download & Watch Online WEB-Rip 480P, 720p & 1080p

জিনিয়াস বা অতিবুদ্ধিমান হওয়ার মুলমন্ত্র কি মানসিক রোগী হওয়া?